Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

জাতীয় তথ্য বাতায়নের ঘটনাপুঞ্জ

সরকারের বিভিন্ন সেবা ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে জনগণের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে গত জুন মাসে চালু হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। এটি আসলে ২৫ হাজার ওয়েবসাইটের সমন্বয়ে তৈরি করা এক ওয়েব পোর্টাল। দৃষ্টিনন্দন এ পোর্টালে জনগণের দরকারি তথ্য কীভাবে রয়েছে, এটা কতটা ব্যবহার-বান্ধব, তথ্যে কতটা সমৃদ্ধ—এসব নিয়ে এই পর্যালোচনা।
জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ওয়েব পোর্টাল চালু করা হয়েছে। এর নাম বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (www.bangladesh.gov.bd)। গত ২৩ জুন এই পোর্টালের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘আমরা যাচাই করে দেখেছি যে বিশ্বের অন্য কোনো দেশে সরকারি ২৫ হাজার ওয়েবসাইট এক জায়গায় নেই। একমাত্র বাংলাদেশে আছে এখন।’ তথ্য বাতায়নে তথ্য সন্নিবেশিত করার ৫০ হাজারের বেশি সরকারি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি। বলে রাখা ভালো www.bangladesh.gov.bd ঠিকানার ওয়েবসাইট অাগেও ছিল। তবে তখন এর ব্যাপ্তি ছিল কম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়েছে এই তথ্য বাতায়ন প্রতিদিন ১৫ লাখ মানুষ দেখেন। র্যাঙ্কিং ও জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ওয়েবসাইট অ্যালেক্সায় (www.alexa.com) ২৩ জুলাই রাতে দেখা যায় জাতীয় তথ্য বাতায়নের অবস্থান বাংলাদেশ থেকে দেখা ওয়েবসাইটগুলো মধ্যে ২৪২ নম্বরে। আর বিশ্বে ৮২,৮৩৫ নম্বর স্থানে।
সরকারের ইচ্ছে হলো দেশের নাগরিকেরা কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, পর্যটন ইত্যাদি তথ্য পাওয়ার জন্য জাতীয় তথ্য বাতায়নকে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ হিসেবে ব্যবহার করবে। বলা হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তি, গেজেট, ই-সেবা, সরকারি ফর্মসমূহ, সিটিজেন চার্টার, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের তালিকা, সাত লাখের বেশি ই-ডিরেক্টরি, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, জনপ্রতিনিধিদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি সব তথ্যই ‘বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন’-এ পাওয়া যাবে। ইউনিয়ন পর্যায়ের ৪,৫৫০, উপজেলা পর্যায়ের ১৪,৪৬০, জেলা পর্যায়ের ৪০৩২, বিভাগ পর্যায়ের ৪৫৫, জেলা পরিষদ পর্যায়ের ৬৪, উপজেলা পরিষদ পর্যায়ের ৪৮৮, মন্ত্রণালয়-বিভাগ পর্যায়ের ৫৫, অধিদপ্তর পর্যায়ের ৩৪৫ এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা পর্যায়ের ৪১৪টি ওয়েবসাইটকে একসূত্রে গেঁথে জাতীয় তথ্য বাতায়ন তৈরি করা হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে এর একটি ইংরেজি সংস্করণও আছে, যা প্রশংসার যোগ্য। তবে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণে গরমিল রয়েছে। যেমন, বাংলা সংস্করণের প্রথম পাতার মুখবন্ধে লেখা রয়েছে: ‘জাতীয় বাতায়নের আওতায় দেশের সকল ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ সকল সরকারি দপ্তরের জন্য প্রায় ২৫ হাজার ওয়েব পোর্টাল (তথ্য বাতায়ন) নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব দপ্তরে পোর্টাল চালু হলে জনগণের তথ্য ও সেবা প্রাপ্তি আরও সহজ হবে।’ অন্যদিকে, ইংরেজি সংস্করণে বলা হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে যা পরীক্ষামূলক (বেটা সংস্করণ) অবস্থায় রয়েছে। এভাবে পুরো বাতায়নজুড়েই বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণের তথ্য ও পরিসংখ্যানে দেখা যায়।
জাতীয় তথ্য বাতায়নে অনেক কিছু থাকলেও এটি ব্যবহারবান্ধব নয়। অর্থাৎ এটি ব্যবহার করতে গিয়ে অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। কোনো তথ্য খঁুজে পাওয়া এখানে খড়ের গাদায় সুই খোঁজার মতো। তারপর যে তথ্যটি খঁুজে পেলেন সেটার ওপর নির্ভর করা যায় কি না, সেটা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিতে পারে। কারণ, প্রচুর ভুল তথ্য ও উপাত্ত রয়েছে। একজন ব্যবহারকারী যখন একবার একটা ভুল তথ্য দেখতে পান, তখন স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য তথ্য নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগে। আর যখন পাতায় পাতায় ভুল তথ্যের সমারোহ দেখবেন তখন বুঝবেন অবস্থাটা কত গুরুতর।
প্রথম পাতায় বড় করে লেখা আছে ৬১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। কিন্তু ভেতরে আছে ৬০টি। আবার ৩৪৫টি অধিদপ্তর ও অন্যান্য বাটন টিপে ভেতরে গেলে পাওয়া যায় ৩৫৩টি, যার মধ্যে তথ্য কমিশন দুবার আছে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদপ্তরের নামগুলো বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজানো না থাকায় বিশাল তালিকা থেকে নিজের পছন্দেরটি খঁুজে পাওয়া দুষ্কর ও শ্রমসাধ্য। আবার প্রথম পাতার অনুসন্ধানে লিখে যে দরকারিটা খঁুজে পাবেন তাও নয়। পৃথকভাবে কলাপাড়া, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা ইত্যাদি লিখে সার্চ করে কিছুই পাওয়া যায়নি। কক্সবাজার লিখে সার্চ করে শুরুতেই ‘হাসপাতালের তালিকা’ দেখা গেছে। আর তাতে ক্লিক করার পর পাওয়া গেছে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার হাসপাতালের তালিকা। এই বাতায়ন ধরে আপনার জেলা কিংবা উপজেলায় চলে গেলে সেখান থেকে আর বাতায়নে ফিরতে পারবেন না। অথচ এই সুযোগটি অনায়াসে রাখা যেত।
মোদ্দা কথা, গুরুত্বপূর্ণ ও নাগরিকসেবার জন্য অনন্য হতে পারত যে পোর্টালটি, সেটি অনেক অযত্ন আর অবহেলায় তৈরি করা হয়েছে। শুধু তথ্যের সঠিকতাই নয়, তথ্যের মান ও তথ্যবিন্যাস নিয়েও হয়তো ভাবেননি এই ওয়েবসাইট নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।
তথ্যের অসংগতি কতটা আছে বোঝার জন্য বেছে নিয়েছিলাম পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলাকে। সেখানে গিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর (ইউপি) চেয়ারম্যানদের নাম, গ্রামের নাম ও সংখ্যায় নানা অসংগতি রয়েছে। তবে স্তম্ভিত হতে হয়েছিল ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের ওয়েবসাইটে গিয়ে। দেখলাম জুন ২০১৪-এর শীর্ষ ২০ সেবাদানকারী কেন্দ্রের তালিকার শীর্ষে থাকা রাজৈরের ইশিবপুর ইউনিয়নের আয় হলো এক মাসে ১০ কোটি ৪৮ হাজার ৮৭৫ টাকা। যা এককথায় অসম্ভব! সবচেয়ে কম আয়কারী হলো উজিরপুরের হারতা ইউনিয়ন। তাদের আয় হলো ১,১৯,৬৩৮ টাকা। এক দিনের তালিকায় দেখা যায় নোয়াখালী সদরের নোয়াখালী ইউনিয়ন আয় করেছে ৩৩,৭৩০ টাকা। আর ৩ নম্বরে রয়েছে ‘অ্যাডমিন’। তার আয় ১২,০৭০ টাকা। তাহলে বুঝুন পুরো ওয়েবসাইটে ডেটা এন্ট্রি করার অবস্থাটি কী!
আমাদের প্রত্যাশা, সবার মিলিত চেষ্টায় নিশ্চয়ই একদিন জাতীয় তথ্য বাতায়ন উৎকৃষ্টমানের একটি ওয়েব পোর্টালে পরিণত হবে, যার সংখ্যা নিয়ে নয় মান নিয়ে গর্ব করা যাবে। আর সাধারণ মানুষ সহজে সব দরকারি সেবা ও তথ্য এ পোর্টাল থেকে পাবে।