বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে নতুন আরো একটি ল্যান্ডমার্ক যুক্ত হতে যাচ্ছে ২০২১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রথমবারের মতো বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আইসিপিসি যা ওয়ার্ল্ড ফাইনালস নামে পরিচিত, এর হোস্ট করার মধ্য দিয়ে। এলক্ষ্যে দিন দুয়েক আগে একটি প্রস্তুতি সভা ছিল মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা স্যার, অধ্যাপক কায়কোবাদ স্যারও উপস্থিত ছিলেন।
সভা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৭ সাল থেকে এখনকার স্টাইলে (রিজিওনাল থেকে ইন্টারন্যামনাল) কনটেস্ট শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কমবেশি ১২-১৫টি দেশ এই আয়োজন হোস্ট করেছে। এর মধ্যে এশিয়ার খুব বেশি দেশ নেই। এমনকি প্রতিবেশী ভারত কিন্তু এটা আয়োজন করেনি। যদিও তাদের রিজিওনাল সাইট একাধিক। সে হিসেবে আমাদের হোস্ট হতে পারাটাই একটা বিরাট ব্যাপার।আইসিপিসির এই জার্নির সঙ্গে যে স্যারের অবদান সর্বাগ্রে চলে আসে, তিনি হলেন কায়কোবাদ স্যার। এনএসইউ-ওর আবুল এল হক স্যার অন্যদের সহায়তা নিয়ে ১৯৯৭ সাল থেকে ঢাকায় রিজিওনাল সাইট শুরু করেন। এ পর্যন্ত ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলো হোস্ট করেছে।
২০০০ সালে বুয়েটের টিম ওয়ার্ল্ড ফাইনালিস্টে ১১তম হয়। এর পরে একবার দেখা গেল অন্য দেশের একটা দল এসে আমাদের সাইটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওয়ার্ল্ড ফাইনালে আমাদের কোন দলের যাওয়া অসম্ভব করে ফেলে। তখন কায়কোবাদ স্যার বুয়েট ও ঢাবির দুইটি দল নিয়ে কানপুরে গিয়ে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ হয়ে আসেন। রেজাল্ট শোনার পর খুশিতে প্রথম আলোর শেষ পাতায় আমি লিখেছিলাম "ভারতের মাটিতে (কম্পিউটারে) ভারতকে হারানোর চেয়ে তৃপ্তি এই মূহুর্তে আর কী হতে পারে"।
কাজে কোন বছর আমাদের টিমের যাওয়ার ছেদ পড়ে নাই। যেহেতু এই প্রতিযোগিতাটি মিডিয়াতে সেভাবে নজরে আসে না, তাই এটির তেমন কোন স্পন্সর নাই। সাম্প্রতিক সময় বাদ দিলে বেশিরভাগ সময় আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং কনটেস্টে আসা যাওয়ার খরচের বড় অংশই কায়কোবাদ স্যারে পকেট থেকে গেছে। মিটিং-এ ড. সোহেল জানান প্র্যাকটিস করার সময়েও স্যার শিক্ষার্থীদের খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব নিতেন। (এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, আইওআই টিমের ছেলে-মেয়েরা স্যারের বাসায় থেকে প্রস্তুতি নিতো। খাওয়া-দাওয়া থাকা সবই স্যারের বাসায়!)
এরকম তিল তিল করে গড়ে ওঠা প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং-এর চূড়ান্ত সম্মান তথা আয়োজক দেশ হতে পাবার কাজটি শুরু হয় ২০১৭ সালে যখন জামিল স্যার রিজিওনাল ডিরেক্টর হোন। তখন কায়কোবাদ স্যার একদিন জামিল স্যারকে হোস্ট হওয়ার জন্য আবেদন করতে বলেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিষয় সামনে থাকায় অবশেষে আমরা ২০২১ সালের আয়োজক হয়েছি।
আয়োজনে আমাদের সামনে দুটি চ্যালেঞ্চ -
১. সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে এই আয়োজন সম্পন্ন করা
২. আমাদের দলের ফলাফল পূর্বের সব ফলাফলকে ছাড়িয়ে যাওয়া (আগের সবচেয়ে ভাল ফল ২০০০ সালের ১১তম।
আর এই দুই লক্ষ্যকে যদি আমরা সবাই মিলে সফল করতে পারি, তাহলেই দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে আসবে আরো একটি সমৃদ্ধি এবং বিশ্ব দরবারে আইসিটি ক্ষেত্রে আরো একবার বাংলাদেশ নিজেদের শক্ত অস্তিত্ব জানান দিতে সক্ষম হবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস